জন্ম:- ১৯০৫ - মৃত্যু:- ১৯৯১
ইন্দুমতী গুহঠাকুরতা রবিশাল জেলার গাভা গ্রামে ঘোষ দস্তিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৫ সালে। তার পৈতৃক নিবাসও ছিল রবিশাল জেলার গাভা গ্রাম। তার পিতার নাম ছিল রজনীনাথ ঘোষ ও মাতার নাম ছিল বসন্তকুমারী ঘোষ। ইন্দুমতী গুহঠাকুরতা ছিলেন ভারতীয় ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের নারী বিপ্লবী।
১৯১৬ সালে ইন্দুমতী গুহঠাকুরতা বিবাহ হয় রবিশালের বানরিপাড়া গ্রামে কেদারনাথ গুহঠাকুরতা-এর সঙ্গে। ইন্দুমতী গুহঠাকুরতার দাদা ছিল রমেন্দ্রনাথ ঘোষ রবিশালের শঙ্করমঠের কর্মী। এটি ছিল যুগান্তর দলের একটি বিপ্লবী কর্মীদের ঘাঁটি। সেখান থেকেই আদর্শ দেশপ্রেম ও বিপ্লবের বীজ ছড়িয়ে পড়েছিল সমস্ত রবিশালে। রমেন্দ্রনাথ ঘোষ এর বন্ধুরা মনোরঞ্জন গুপ্ত, অরুণ গুহ, জিতেন কুশারী আরো অনেকে তাদের বাড়িতে যাওয়া আসা করতো। তাদের দেশপ্রেম নিয়ে কথাবার্তা ইন্দুমতী গুহঠাকুরতার মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করতো।
ইন্দুমতী পরিবার রাজনৈতিক পরিবার। ১৮২১ সালে অসহযোগ ও জাতীয় আন্দোলনে মা ও বৌদির সাথে যোগ দেন। তিনি পাড়ায় পাড়ায় চরকা নিয়ে বিলি করে বেড়াতেন। ১৯২৬ সালে বানরিপাড়া গিয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। সেখানকার স্থানীয় কংগ্রেস নেতা কেশবচন্দ্র বন্ধোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। কেশবচন্দ্র এর অনুপ্রেরনায় তিনি প্রকাশ্যে কাজ করতে শুরু করেন। সেখানে আরো তিন গ্রামের মহিলা তার সহকর্মী হন, তারা হলেন সরযুবালা সেন, লাবন্যপ্রভা দাশগুপ্ত ও যোগমায়া দত্ত।
ইন্দুমতী গুহঠাকুরতা ১৯৩০ সালের আইন অমান্য আন্দোলনে প্রকাশভাবে যোগদানের দেন। কিছু পুরুষ কর্মী গ্রপ্তার হলে তিনি বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সভাসমিতির পরিচালনা করেন। ১৯৩১ সালে ইন্দুমতী গুহঠাকুরতা আর সরযুবালা সেন সাত দিন সাত রাত বানরিপাড়া বাজারে অনশন শুরু করে দেয় বিদেশি বস্ত্র বর্জনের জন্য। সেখানে তুমুল আন্দোলন দেখা যায়, তখন মনে হয়েছিল যে ব্রিটিশ রাজত্বের অবসান ঘটছে। সাত দিনের শেষে যখন বিদেশি বস্ত্র বর্জন করা হলো, তখন তারা অনশন ভাঙলো।
ইন্দুমতী গুহঠাকুরতা ১৯৩২ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নেন, ধরা পড়ে তিনি তিন মাসের কারাদণ্ড ভোগ করে। তারপর আবার তিনি স্বগৃহে দুই মাস অন্তরীণ থাকেন। পুনরায় সেপ্তম্বর মাসে গ্রেপ্তার হয়ে ছয় মাসের জেল হয়। পরে ১৯৪২ সালের আন্দোলনে তিনি তিনজন সহমর্মী সহ গ্রেপ্তার হন। প্রতিষ্ঠানের পুরুষ কর্মীরাও সকলে গ্রেপ্তার হন আর প্রতিষ্ঠান কে বেআইনি ঘোষণা করা হয়। দুই মাসের কারাদণ্ড ভোগ করার পর ইন্দুমতী গুহঠাকুরতা ও যোগমায়া দত্তকে স্বগৃহে অন্তরীণ করে রাখা হয়। ১৯৪৫ সালের অক্টোবর মাসে তারা মুক্তি পান।
১৯৫০ সালে ইন্দুমতী গুহঠাকুরতাকে তার কর্মভূমি ছেড়ে চিরদিনের জন্য পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। তিনি সমাজ সেবার কাজেও জড়িত ছিলেন। শেষে ইন্দুমতী গুহঠাকুরতা ১৯৯১ সালের মৃত্যুবরণ করেন।
(তথ্যসূত্র সংগৃহীত)
লেখক::- প্রকাশ
📘📘📚:: স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী::কমলা দাশগুপ্ত
No comments:
Post a Comment
আপনার মেসেজের জন্য ধন্যবাদ, আপনাদের সকল মেসেজ গুলি আমি দেখি, ব্যাস্ততার জন্য অনেক সময় উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়না, আশা করি সময় করে সবার উত্তর দিবো, ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।