নাক ডাকা সমস্যায় অনেকে ভোগেন। মাঝবয়সী ও বয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি হয়। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে অল্পবিস্তর নাক ডাকা তেমন ক্ষতিকারক নয়। বিকট শব্দে নাক ডাকা যা বন্ধ দরজা দিয়েও পাশের ঘর থেকে শোনা যায়, তা সব বয়সেই অস্বস্তিকর। বাচ্চাদের নাক ডাকা সব সময়ই অস্বাভাবিক, যা সাধারণত বিভিন্ন রোগের কারণে হয়ে থাকে। মারাত্মক হল ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ হয়ে আসা বা শ্বাস নেয়ার জন্য হাঁসফাঁস করা যাকে স্নোরিং ও স্লিপ এপনিয়া সিনড্রোম বলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি শ্বাসের রাস্তায় বাতাস ব্যাপকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে হয়ে থাকে, একে অবসট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া বলে।
এ প্রতিবন্ধকতা নাসারন্ধ্র্র থেকে ফুসফুস পর্যন্ত যে কোনো স্থানে হতে পারে। সাধারণত নাক, তালু বা মুখগহ্বর হল নাক ডাকার উৎপত্তিস্থল। এ স্থানে কোনো রোগ বা প্রদাহের কারণে প্রতিবন্ধকতা হলে নাক ডাকার সৃষ্টি হয়ে থাকে। নাকের হাড় বাঁকা, সাইনাসে প্রদাহ এবং মোটা মানুষের ক্ষেত্রে গলার মধ্যে অতিরিক্ত মেদ জমা নাক ডাকার প্রধান কারণ। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এডেনয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে গেলে অথবা ঘনঘন ইনফেকশনজনিত অথবা কোনো কারণে টনসিল বড় হয়ে গেলে অথবা উভয় ক্ষেত্রে সাধারণত এমনটি হয়ে থাকে।
More Read: শিশুর স্মার্টফোন আসক্তি
উপসর্গ
বুদ্ধিমত্তার ক্রমশ অবনতি, অমনোযোগিতা, মনোনিবেশের অক্ষমতা, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন, মাথাব্যথা, সকালে মাথা ভার হয়ে থাকা, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ঘনঘন প্রস্রাব ইত্যাদি নাক ডাকা রোগের প্রধান উপসর্গ। সাধারণত এ ধরনের বেশিরভাগ রোগী দিনের বেলা ঘুমঘুম ভাব বা তন্দ্রাভাবজনিত সমস্যার কারণে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, রোগীর নিকটজন নাক ডাকা বা দমবন্ধ হওয়া সমস্যাজনিত কারণে রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসেন।
ঘুমন্ত অবস্থায় যা ঘটে
রোগী সাধারণত শোয়ামাত্র ঘুমিয়ে পড়ে। রোগী ঘুমানোর সঙ্গে সঙ্গে নাক ডাকতে শুরু করে এবং নাক ডাকার শব্দ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে থাকে এবং এক পর্যায়ে রোগীর দম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে আসে। এর ফলে রোগী দম নেয়ার জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকে। এ অবস্থা চরমে উঠলে রোগীর ঘুম ভেঙে যায়; ফলে রোগী আবার স্বাভাবিক শ্বাস নিতে শুরু করে। এতে তার কিছুটা প্রশান্তি আসে। যেহেতু শরীর ক্লান্ত থাকে, সে আবার অতি দ্রুত নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং পুনরায় নাক ডাকার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ ঘটনাচক্র সাধারণত পুনঃপুনঃ আবর্তিত হতে থাকে। ঘুমের মধ্যে আরাম হওয়ার পরিবর্তে রোগী সারারাত ধরে জীবন বাঁচানোর সংগ্রামে লিপ্ত থাকে। এর ফলে জীবনের ওপর ঝুঁকি পর্যন্ত নেমে আসতে পারে। যেমন- কার্ডিয়াক এরেস্ট, হার্ট ফেইলুর এবং শিশুদের ক্ষেত্রে কট ডেথ ইত্যাদি। এসব রোগী দিনের বেলাতেও দুর্বল ও তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে এবং কাজে মনোনিবেশ করতে ব্যাঘাত ঘটে। রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতার দরুন ফুসফুসিয় উচ্চ রক্তচাপ, স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া এবং হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার মতো মারাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে।
এ রোগের প্রাথমিক অবস্থায় ঘুমের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে অথবা ঘুমানো অবস্থায় শরীরের কোনো বিশেষ অবস্থানে এ ঘটনা ঘটে থাকে।
রোগ নিরূপণ
নাকের এন্ডোস্কপি, গলার এক্স-রে, বুকের এক্স-রে, ইসিজি এবং রক্তের কিছু নিয়মিত সাধারণ পরীক্ষা করা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। নাকের এন্ডোস্কপি (এক ধরনের এন্ডোস্কোপ যা শুধু নাক এবং শ্বাসনালি দেখার জন্য নির্মিত) সবক্ষেত্রে দরকার, যাতে করে শ্বাসের রাস্তার উপরিভাগের অবস্থা নিরূপণ করা যায়।
‘পলিসমনোগ্রাফি’ দিয়ে ঘুমের শ্বাসহীন অবস্থা ও নাক ডাকার মাত্রা সবচেয়ে ভালোভাবে নির্ণয় করা যায়। এ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে একটি বিশেষ ব্যবস্থায় শরীরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক লিড (পরিমাপক) বসিয়ে ঘুমের ব্যবস্থা করানো হয়। এর দ্বারা ঘুমের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা, এ সময়ে রক্তে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা এবং শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যক্রম ও বিভিন্ন রকম সমস্যা রেকর্ড করা যায়। এর একটি সহজ বিকল্প হল রোগীর ঘুমন্ত অবস্থায় পাল্স অক্সিমিটারের মাধ্যমে রাতভর অক্সিজেনের মাত্রা রেকর্ড করা।
সাধারণ করণীয়
মেদবহুল শরীরে ওজন কমানো অত্যাবশ্যক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ওজন কমালেই নাক ডাকা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। রোগীর ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করতে হবে। ঘুমের ওষুধ সেবন করার অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করতে হবে। দিবাভাগে অতিরিক্ত পরিশ্রমও পরিহার করা উচিত।
বিশেষ করণীয়
শিশুদের প্রধান কারণ হল টনসিল ও এডেনয়েড গ্রন্থির প্রদাহ বা বড় হয়ে যাওয়া। যদি এগুলোর কারণেই এটি ঘটে থাকে তাহলে অপারেশনের মাধ্যমে তা অপসারণ করাই একমাত্র বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা। বিশেষ করে বড় এডেনয়েড যদি নাক ডাকা এবং ঘুমে শ্বাসহীন রোগের কারণ হয় তবে তা অপসারণ বাধ্যতামূলক। এ ব্যাপারে বিশ্বের কোথাও বা চিকিৎসাবিজ্ঞানের কোনো শাখায় কোনো দ্বিমত নেই।
প্রাপ্তবয়স্কদের ওজনাধিক্যের পর নাক ডাকার দ্বিতীয় কারণ হল নাকের কোনো সমস্যা। সাধারণত নাকের হাড় বাঁকা, নাকের অ্যালার্জি, নাকের ভেতরের মাংস বেড়ে যাওয়া, নাকের পলিপ এগুলোই নাকের সমস্যার প্রধান কারণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্বাসনালির টিউমার অথবা জিহ্বার পশ্চাৎ ভাগের টিউমার বা টনসিলের টিউমার এসব জটিল কারণেও হতে পারে।
স্বরযন্ত্র বা তার আশপাশের রোগের কারণে সাধারণত স্ট্রাইডর হয়ে থাকে যা নাক ডাকার শব্দ থেকে ভিন্নতর। এ দুই ধরনের শব্দের তফাৎ নির্ণয় করা অনেক সময় ডাক্তারের পক্ষেও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
নাক ডাকা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য প্রথমেই নাকের সমস্যার চিকিৎসা করতে হবে। নাকের অ্যালার্জি ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নাকের হাড় বাঁকা থাকলে তা অবশ্যই শল্যচিকিৎসা দ্বারা অপারেশন করাতে হবে। সর্বোপরি নাকে সিপিএপি (কন্টিউনাস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার) মেশিন ব্যবহার করা যায়। তা ব্যবহার করার আগে নাকের কোনো সমস্যা থাকলে আগে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ যন্ত্রের ব্যবহার প্রথম দর্শনে দেখতে একটু দৃষ্টিকটু ও অস্বাভাবিক মনে হতে পারে, এটি ব্যবহার শুরু করলে রোগীরা এর সুফল পেতে শুরু করে।
Source Of: Jugantor
#নাক ডাকার সহজ সমাধান, #নাক ডাকার সমস্যা চিরতরে দূর করার উপায়, #নাক ডাকার হোমিও চিকিৎসা, #নাক ডাকার ঘরোয়া সমাধান, #নাক ডাকা থেকে মুক্তির উপায়, #নাক ডাকা বন্ধ করার হোমিওপ্যাথি ঔষধ, #নাক ডাকার ক্ষতি, #শিশুর নাক ডাকার কারণ,
No comments:
Post a Comment
আপনার মেসেজের জন্য ধন্যবাদ, আপনাদের সকল মেসেজ গুলি আমি দেখি, ব্যাস্ততার জন্য অনেক সময় উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়না, আশা করি সময় করে সবার উত্তর দিবো, ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।