Adsterra

a-ads

pop

Friday, August 26, 2022

গায়ক,গীতিকার,সুরকার অভিনেতা।শচীন দেব বর্মণ, মান্না দে যার সুযোগ্য শিষ্য। কৃষ্ণচন্দ্র দে।

কৃষ্ণচন্দ্র দে।

কৃষ্ণচন্দ্র দে (২৪শে আগস্ট,১৮৯৩ — ২৮শে নভেম্বর,১৯৬২) ছিলেন বাংলা সঙ্গীতের একজন আদি ও প্রবাদ পুরুষ, কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী, সিনেমা ও থিয়েটার অভিনেতা, থিয়েটার প্রযোজক, সঙ্গীত পরিচালক ও দক্ষ সংগীত শিক্ষক। তিনি মুম্বাইয়ের সঙ্গীতজগতে সঙ্গীতাচার্য 'কে.সি.দে' নামেও সুপরিচিত। বাংলার অপর এক কিংবদন্তী শচীনদেব বর্মণের প্রথম সঙ্গীত শিক্ষক ছিলেন তিনি। তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র বৈচিত্র্যের বিচারে সর্বকালের অন্যতম সেরা কণ্ঠশিল্পী মান্না দে।

Tuesday, August 16, 2022

যে দিন ভারত স্বাধীন হল... ১৫ই অগষ্ট, ১৯৪৭

যে দিন ভারত স্বাধীন হল... ১৫ই অগষ্ট, ১৯৪৭






 


(এক একাদশ বর্ষীয় বালকের দৃষ্টি ও অনুভূতিতে ৭৫ বছর পূর্বের দিনটির
স্মৃতিচারণ)
১৯৪৫ সাল, মে মাস। ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বমহাযুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা হল। সেই রাত্রিতেই আমরা জামশেদপুর বা টাটানগর থেকে ট্রেণে কলকাতা রওয়ানা হয়েছি, বাবা দীর্ঘ দু বছর পর ঐ শহরের সামরিক হাসপাতাল থেকে বদলি হয়ে কলকাতার আলিপুরের কমান্ড মিলিটারী হাসপাতালে নিযুক্ত হয়েছেন। ট্রেনে দু-তিনটি কামরা ভর্তি আমেরিকান ও বৃটিশ সৈন্যরা, পথে প্রত্যেক স্টেশনে নেমে মদমত্ত হয়ে তাদের মহোল্লাসে বাঁধনহীন নৃত্য-গীত-হুল্লোড় অন্য যাত্রীদের বিনোদনের পরিবর্তে আশঙ্কাই সৃষ্টি করছিলো। ভোরবেলা কলকাতা পৌঁছোনো গেল। তখন স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য মিটিং-মিছিল-সত্যাগ্রহ-হরতাল এক নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, সেদিনও শহরে ধর্মঘট পালিত হচ্ছে, তবে অতি প্রত্যুষে আমরা কোনোক্রমে একটি ঘোড়ার গাড়ী অবলম্বন করে ভবানীপুরে দাদামহাশয়ের বাড়ী পথে বিনা বাধায় উপনীত হলাম।
যে দিন ভারত স্বাধীন হল... ১৫ই অগষ্ট, ১৯৪৭
স্বাধীনতা তখন দুয়ারদ্বারে। মহাযুদ্ধের অবসানে বৃটিশ সাম্রাজ্য হীনবল, বিধ্বস্ত, তাদের শহরগুলির অনেকাংশই ধ্বংশস্তূপে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায় এই বিশাল দেশে, অতি প্রতিকূল পরিবেশে, ৩৪ কোটি গভীর বিদ্বেষপূর্ণ, প্রতিরোধী জনসাধারণকে নিয়ন্ত্রণ করে সুস্থ প্রশাসন চালনা করা তাদের পক্ষে কার্যতঃ অসম্ভব। ১৯৪৬ সালের ভারতীয় নৌসেনা বিদ্রোহে তাদের এই সিদ্ধান্তে শিলমোহর পড়লো। স্থির হলো যথাশীঘ্র সম্ভব তারা ভারতীয় নেতৃত্বের হাতে শাসনভার সমর্পণ করে এই দেশ পরিত্যাগ করবে।
যে দিন ভারত স্বাধীন হল... ১৫ই অগষ্ট, ১৯৪৭
১৬ই অগষ্ট, ১৯৪৬। কলকাতার ইতিহাসে কলঙ্কতম দিন রচিত হলো বিনা সতর্কীকরণে বীভ স সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামায়। জিন্নার প্ররোচনায়, তখন বাংলায় শাষণরত পাকিস্থানপন্থী মুসলীম লীগের ষড়যন্ত্রে, অবিভক্ত বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সুরাবর্দীর ইচ্ছাকৃত নিস্ক্রিয়তায় যে নারকীয় মারণযজ্ঞের অবতারণা হলো তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরলতম। বিনা প্রতিরোধে সশস্ত্র গুন্ডাবাহিনী যথেচ্ছা খুন-জখম, অত্যাচার, লুটপাট, অগ্নিসংযোগে প্রবৃত্ত হলো। সে ভয়াবহ সময়ের কথা সেই বাল্যমনের চিত্রপটে গভীরভাবে অঙ্কিত আছে, তা কোনোদিন বিস্মরণ হবে না। পাড়ায় পাড়ায় সুরক্ষার জন্য প্রস্তুতি পড়ে গেল, ছেলেদের দল দিবারাত্রে সজাগ পাহারায় টহল দিতে লাগল, তাদের অস্ত্র ছুরি, বঁটি, লাঠিসোটা, সোডার বোতল, মশাল। আমাদের বাড়ীর ছাতে ইট-পাটকেল স্তূপাকার করে রাখা হলো, দাদামশায়ের দুনলা বন্দুকটি তেল মার্জনা করে পরিস্কৃত করে রাখা হলো শত্রুবাহিনীর মুকাবিলা করার জন্য। দুর থেকে ভেসে আসা হৈ-হট্টগোল, গোলমালের শব্দ, কোন কোন গৃহে অগ্নিসংযোগের দরুন লেলিহান অগ্নিশিখা শরীর-মনে শিহরণ, ভীতি সঞ্চার করলো। দিনের বেলা চতুর্দিক থেকে হাড়-হিমকরা দুঃসংবাদ আসে, আর আমাদের আহার-নিদ্রা ব্যাহত হয়। এই নৈরাজ্যের হিংস্র, আতঙ্ককর সময় প্রলম্বিত হয়েছিল স্বাধীনতালাভের দিন পর্যন্ত, বহু প্রাণহানি, অত্যাচার, অগ্নিসংযোগ, অবাধে লুটপাটের পর। দেশভাগ হওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলো।
যে দিন ভারত স্বাধীন হল... ১৫ই অগষ্ট, ১৯৪৭
১৪ই অগষ্ট, ১৯৪৭। দুরু দুরু বক্ষে, অসীম আগ্রহে আমরা অপেক্ষা করছি সেই বহু বাঞ্ছিত, ৩৪ কোটি দেশবাসীর প্রাণমনে আকাঙ্খিত আগামী কাল সেই দিনটির জন্য। দীর্ঘকালব্যাপী কোটি কোটি জনসাধারণের প্রাণান্তকর সংগ্রামের ফসল বিদেশী শাষনমুক্ত সম্পূর্ণ স্বনিয়ন্ত্রিত স্বাধীন দেশ, এ যেন আমাদের এক স্বর্গীয়, মধুর স্বপ্নের রূপায়ণ! এই দিনটি ক্ষুদিরাম-প্রফুল্লচাকী সমেত বহু শহীদের পুণ্য রক্ত-তর্পণে শুদ্ধ, সুদীর্ঘ কালের সংগ্রামের, অসংখ্য নেতা ও কত সাধারণ মানুষের জীবননাশ, ত্যাগ, অত্যাচার, কারাবাস ও অমিত দুঃখবরণের সার্থক পরিণাম। আর তো কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা!
সে রাত্রে সবার চোখে নিদ্রা সূদুর পরাহত। প্রতিটি মিনিট, প্রতি পল-অনুপল আমরা গুণছি সেই মহামূহুর্তের জন্য, যখন ভারতবর্ষ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি অনন্য বিশাল স্বাধীন উপমহাদেশ হিসাবে স্বীকৃত হবে, যখন আমরা গর্বভরে, মস্তক উন্নত করে জগতের অন্যান্য স্বাধীন দেশগুলির সাথে একাসনে বসার অধিকারের সম্মান অর্জন করব।
যে দিন ভারত স্বাধীন হল... ১৫ই অগষ্ট, ১৯৪৭
ঠিক মধ্যরাত্রির ঘন্টা বাজলো। সঙ্গে সঙ্গে ঘরে ঘরে শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনির নিনাদ, মন্দিরে মন্দিরে কাঁসর-ঘন্টা-ঢাক বাদ্য সহযোগে দেব-দেবীর বিশেষ পূজা ও আরতি, গীর্জাগুলিতে ঘন্টাধ্বনি, বন্দরে একাধিক জাহাজের সুতীক্ষ্ণ বাঁশী, ফোর্ট উইলিয়াম থেকে কামান দাগা হল। দিল্লী থেকে বেতারে ভেসে আসছে নেহরুজির লোকসভায় সদস্যদের সন্মুখে সেই গায়ে কাঁটা দেওয়া ভাষণ, Tryst with Destiny। বড়রা নিবিড় মনঃসংযোগে শুনছেন সেই অসাধারণ ভাষণ, আমরা ছোটরা পাশে বসে বুঝবার চেষ্টায় আছি, কি এক আবেগে কণ্ঠ অবরুদ্ধ, চক্ষু বাষ্পাচ্ছন্ন, এক অপূর্ব সম্মোহনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তারপর তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম পতাকা উত্তোলন করলেন দিল্লীর ইন্ডিয়া গেটে, বেতারে সেই শ্রবণেই আমরা স্বতঃস্ফূর্ত, তাৎক্ষণিক স্বোচ্ছাসে নৃত্য, গীত ও করতালি দিয়ে সদ্যোজাত নবভারতকে প্রণতি জানালাম।
সেই মধ্য রাত্রিতেই গৃহবাসীরা উল্লাসে মাতোয়ারা হয়ে রাস্তায়,পথে,পার্ক-উদ্যানে বহির্গত। সম্পূর্ণ অপরিচিতরাও পরষ্পরের প্রতি প্রীতি-সম্ভাষণ, কোলাকুলি, দেশবাসীরা যেন এক অখন্ড ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ, তাদের যেন একটিই পরিচয়, তারা স্বাধীন ভারতবাসী। ঠিক এক বছর পূর্বে যে কদর্য ভ্রাতৃঘাতী নিধনযজ্ঞে চার সহস্রাধিক প্রাণ বলিদান হয়েছিল সেটি আজ যেন এক অলীক দুঃস্বপ্ন, আজ কোলাকুলির, প্রীতির মেলবন্ধনে ধর্ম, জাতি, প্রাদেশিকতা সব একাকার.....এক জাতি, এক প্রাণ, একতা। আবির খেলায় আকাশ-বাতাস রঙ্গীন, এই অকাল হোলি উৎসবে সর্বজন মাতোয়ারা! কালী পটকা, দোদমার কর্ণবিদারী আওয়াজে, তুবড়ীর অগ্নি ফোয়ারায় অকাল দীপাবলীর আমেজ এসে যায়। সব মিষ্টান্ন ভান্ডার খোলা, অকাতরে রসগোল্লা-সন্দেশের হরির লুট চলছে, দোকানীরা আজ দরাজ দিল! এক অত্যুৎসাহী মাস্তুতো দাদা বৌবাজারের ভীমনাগের দোকান থেকে তাদের নব সৃষ্টি তেরঙ্গা সন্দেশ এনে হাজির, আমাদের উৎসাহের অন্ত নেই! বোরোলীন, জবাকুসুম, লিলি বিস্কুট ঘোষণা করেছে স্বাধীনতা দিবসে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এক হাজার পণ্যদ্রব্য বিনামূল্যে বিতরণ করবে।
ভোরের আলো ফুটে উঠল। নবজাতক শিশু স্বাধীন ভারতবর্ষে আজ প্রথম সূর্যোদয়। অগণিত প্রভাত-ফেরীর গান শোনা যাচ্ছে....ও আমার দেশের মাটি তোমার পায়ে ঠেকাই মাথা। তখন প্রতিটি বিশিষ্ট দিনের ভোরে প্রভাত-ফেরীর সুরে আমাদের ঘুম ভাঙ্গতো, নেতাজীর জন্মদিন, ২৫শে বৈশাখ, দোলযাত্রা, নববর্ষে। পাড়ায় পাড়ায় ছেলেমেয়েরা ভাড়া লরীতে শহর পরিক্রমা করতো, গানে, আবৃত্তিতে মাতিয়ে দিয়ে। আজ সবই দেশাত্মবোধক গান সমবেতকণ্ঠে শোনা যায়, একটি দল উচ্চতানে পরিবেশন করছে
বল বল বল সবে শত বীণা-বেনু-রবে
ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে
আমাদের পাড়ার ছেলেমেয়েরা বোধহয় লরী যোগাড়ে অক্ষম হয়েছে, অদম্য উৎসাহে তারা পদযাত্রার সাথে সাথেই উদাত্তকণ্ঠে গাইছে
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভুমি
তাদের অত্যুৎসাহী একজনের গলায় দোদ্যুলমান একটি চাদরে আবার একটি হারমোনিয়াম শোভা পাচ্ছে !
বেলা বাড়বার সাথে কয়েকটি অভিভাবকের পরিচালনায় আমরা ছোটরাও রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম, শহরের অধিবাসীরা কি ভাবে অবারিত আনন্দ-উৎসবের ফোয়ারায় মেতে উঠেছে, এই দৃশ্য তো জীবনে একবার বই দুবার আসে না। কিন্তু তার মধ্যেও একটি বেদনা পাষাণের ন্যায় হৃদয় ভারাক্রান্ত করে আছে, এই আনন্দ-যজ্ঞের হোতা দেশবাসীর সেই প্রিয়তম প্রাণপুরুষ কোথায় ? নেতাজী বিহনে এ যেন শিবহীন যজ্ঞ, রামবিহীন অযোধ্যা! আজ সেই পুরুষশ্রেষ্ঠের বাসভবন মহাতীর্থে পরিণত হয়েছে, আজ আপামর শহরবাসীর শ্রদ্ধানিবেদনের গন্তব্যস্থল এলগিন রোড। তাই কি বারংবার শোনা যাচ্ছে সমবেত আকুল কণ্ঠে সেই গীতটির ধ্বনি.....তোমার আসন শূণ্য আজি, হে বীর পূর্ণ করো!
আর পাখীর চোখের মত গভর্ণমেন্ট হাউস....এখন রাজ ভবন.....দর্শনের জন্য জনতা হাঁটা দিয়েছে ডালহাউসি স্ক্যোয়ারে। কোনো পরিবহনে যাওয়া অসম্ভব, যদিও আজ সবই বিনা মাশুলে। বাদুড়-ঝোলা বইতেই পড়েছি, আজ চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা হলো কি ভাবে বাস-ট্র্যামের ভিতরে, সন্মুখে, পশ্চাতে এমন কি ছাতেও ভ্রমণ করা যায় এই অবিশ্বাস্য দৃশ্যে! ছোটলাটসাহেবের এই প্রাসাদ সিপাই-শান্ত্রীর পাহারায় সূচিভেদ্য সুরক্ষায় পরিবেষ্টিত হয়ে থাকে, তিনি কলকাতা ত্যাগ করেছেন, আজ ঘোষণা করা হয়েছে হর্ম্যটি জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত। বিদেশি শাষকবর্গ দেশের সম্পত্তি দেশবাসীর হাতেই সমর্পণ করেছে। তবে এর ফলে কিছু পরিতাপজনক ঘটনা ঘটলো, কিছু বিশৃঙ্খল দর্শনার্থীদের অবাঞ্ছিত ক্রিয়াকলাপের ফলে কয়েকটি দামী আসবাব, অমূল্য ভাস্কর্য ও চিত্রকলা ক্ষতিগ্রস্ত হল।
যে দিন ভারত স্বাধীন হল... ১৫ই অগষ্ট, ১৯৪৭
আজ বাড়ীতে ভোজন-মহোৎসব। রাঁধুনী ব্রাহ্মণকে সরিয়ে মাসীমারা কোমর বেঁধে রাঁধতে লেগেছেন...গোবিন্দভোগ চালের পোলাও, ছোলার ডাল, তপসে মাছ ভাজা, পাকা রুই মাছের কালিয়া, আলুবখরার চাটনী ও ছানার পায়েস। এই শেষোক্ত পদটি আমার সত্তরোর্দ্ধ দিদিমার স্বহস্তে সযত্নে সৃষ্টি, এই অমৃততুল্য সুখাদ্যটির স্বাদের তুলনায় ক্ষীর-রাবড়ী-মালাইও হেয় মনে হতো। অতি সাত্বিক দাদামশায়ের গৃহে মাংস, মুরগীর ডিমের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
সন্ধ্যা নামলো। সব বিশিষ্ট সরকারী ভবন, যাদুঘর, মনুমেন্ট, ভিক্টোরিয়া আলোকমালায় সজ্জিত, সাধারণ সব গৃহে অসংখ্য প্রদীপ, মোমবাতির বাহার...তখন তো টুনি বাল্বের প্রচলন হয় নি....চিরপরিচিত শহরটি মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ অচেনা, যেন কোন ঋষির মন্ত্রবলে এটি একটি অপরূপ জ্যোতির্ময় মায়াপুরীতে পরিণত হয়েছে।
হৈ-হুল্লোড়, আকাশে তারাবাজি, ঢাকের বাদ্যি, গানের সুরচ্ছটার মধ্য দিয়ে এই স্বপ্নময় দিনটির অবসান হল। সন্মুখে কঠিন সংগ্রাম, শুরু হবে পরিশ্রম, শিক্ষা, শৃঙ্খলা ও সততার মাধ্যমে আমাদের এই নিপীড়িত, ক্ষতবিক্ষত দেশটিকে পুনর্গঠন করে বিশ্বসভায় উচ্চমর্য্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা।

Saturday, August 6, 2022

নবাব সুলিমুল্লাহর জীবনী

নবাব সুলিমুল্লাহর জীবনী

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা , যার দান করা ৬০০ একর জমির উপর দা‌ড়িয়ে আ‌ছে আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা মেডিকেল , বুয়েট সেই নবাব স্যার সলিমুল্লাহর কে স্মরণ করে না।

আসুন আমরা সং‌ক্ষিপ্ত প‌রিস‌রে হ‌লেও এই জা‌তির উচ্চ‌শিক্ষার মহানায়‌ককে জানার চেষ্টা ক‌রিভ
***জীবনী :
নবাব সুলিমুল্লাহর জন্ম ১৮৭১ সালের ৭ ই জুন। তাঁর বাবা ছিলেন নওয়াব স্যার খাজা আহসানউল্লা (১৮৪৬-১৯০১) এবং দাদা ছিলেন নওয়াব স্যার খাজা আবদুল গণি (১৮১৩-৯৬)। এই দুজনই ঊনবিংশ শতকের বাংলাদেশের সমাজ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। নিঃসন্দেহে পরিবারটি ছিল অভিজাত ও ধনাঢ্য। কিন্তু অভিজাত পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি সাধারণ মানুষের দুঃখকে তিনি নিজের দুঃখ মনে করতেন। তিনি আকাতরে দান-খয়রাত করে গেছেন।
স্যার সলিমুল্লাহর বাবা আহসানউল্লা ১৯০১ সালের ৭ ডিসেম্বর সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ করে ঢাকায় তথা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো #বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলেন, প্রথম বিজলি বাতির আলো জ্বলেছিল #আহসান_মঞ্জিলে
(১)নবাব সলিমূল্লাহ সেই যিনি সর্বপ্রথম পানীয় জল এবং টেলিফোন ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে আধুনিক ঢাকার জন্ম দেন।
(২)ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯০২ সালে তিনি ১লাখ ২০হাজার টাকা দান করেছিলেন। সেই টাকায় এবং তাঁর দান করা জমিতে স্থাপিত হয়েছিল আহসানউল্লা স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৯২২ সালে যা আহসানউল্লা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং ১৯৬০ সালে আহসানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে উন্নীত হয়। সেটিই এখনকার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়(BUET)।
(৩) নবাব সলিমূল্লাহ যিনি ১৯০৩ সালে বড় লাট লর্ড কার্জন ঢাকায় সফরে এলে আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত দীর্ঘ বৈঠককে তার নিকট পূর্ব বাংলার সমস্যাগুলো তুলে ধরেন।শেষ পর্যন্ত ঢাকাকে কেন্দ্র করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে একটি নতুন প্রদেশ গঠনের বিষয়ে ইংরেজরা মত দেয়।
(৪)নবাব সলিমূল্লাহ যিনি ১৯১১ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার কার্জন হলে ল্যান্সলট হেয়ারের বিদায় এবং চার্লস বেইলির যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নওয়াব আলী চৌধুরীকে নিয়ে পৃথক দুটি মানপত্র নিয়ে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
(৫) (DU) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি জমিই শুধু দান করেননি, প্রধান অর্থদানকারীও ছিলেন। এতে তাঁর অর্থভাণ্ডারে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। শেষে সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মহাজনদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল। জমিদারি চলে গিয়েছিল কোর্ট অব ওয়ার্ডসে।
(৬) নবাব সলিমূল্লাহ যিনি ১৯০৬ সালে নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য এবং ধর্ম রক্ষায় প্রায় ছয় মাসের প্রচেষ্টায় পাক-ভারত উপমহাদেশে ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ’ গঠন করেন।
(৭) নবাব সলিমূল্লাহ যিনি আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক শিক্ষা বিভাগে মুসলমানদের জন্য সহকারী পরিদর্শক ও বিশেষ সাব ইন্সপেক্টরের পদ সৃষ্টি করেন।
(৭) নবাব সলিমূল্লাহ যিনি বর্ণবাদী-ব্রাহ্
মণ্যবাদী চক্রান্তে বিট্রিশ সামাজ্যবাদে শত বছরের অধিক চাষাভূষা, কচোয়ান-দাঁরোয়ান ও গোলাম বানিয়ে রাখা মুসলিমদের কথা ভেবে প্রথম জেগে উঠেন তারপর মুসলিমদের সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন।
(৮)নবাব সলিমূল্লাহ, যিনি সুদূর তুরস্কের ভূমিকম্পে মানুষের কষ্টের কথা শুনে সাহায্যের জন্য টাকা-পয়সা পাঠিয়েছিলেন।
(৯)নবাব সলিমূল্লাহ, যিনি মানুষকে তার সকল সম্পদ অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে ঋণী হয়েছিলেন। সোনালী ব্যাংক সদরঘাট শাখায় এখনও তার বন্ধক রাখা সিন্ধুক “দরিয়ায়ে নূর” রক্ষিত আছে।
আচ্ছা আমরা ক'জন জানি এই মহান ব্যক্তির কথা? তার অসামান্য কীর্তির কথা?
এই বুয়েট না থাকলে কারা বিশ্বমানের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ করে দিত?
আজ যত-শত আবর্জনারই আমাদের জ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাড়িয়েছে যেখানে এই মহান ব্যক্তিদের একটু জায়গা কোথায়!!
****রহস্যজনক মৃত্যুঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে তৎকালীন হিন্দু সমাজ এবং লাটের সাথে তার বাদানুবাদ হয়।
কথিত আছে যে, বড়লাট রাজি ছিলেন না ঢাকায় কোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে। এই নিয়ে নবাবের সাথে বড় লাটের তীব্র বিতর্ক হয়। এসমসাময়িক সময়েই তার মৃত্যু হয় কলকাতায়। পরে প্রচার করা হয় যে হৃদরোগে তিনি মারা গেছেন।
তিনি সেদিনই কলকাতায় অনুষ্ঠিত তাঁর জানাজায় বিপুল জনসমাগম হয়েছিল। পরদিন লাশ ঢাকায় আনা হয় এবং কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ঢাকার বেগমবাজারে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
উনার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি , আল্লাহ্‌ উনাকে জান্নাত দান করুন (আমিন)।
( সংগৃ‌হিতঃ রুশো)

Wednesday, August 3, 2022

কোলে পাঁচ বছরের সন্তানের নিথর দেহ, হাসপাতাল থেকে বাড়ির পথে হেঁটে চলেছেন মা

কোলে পাঁচ বছরের সন্তানের নিথর দেহ, হাসপাতাল থেকে বাড়ির পথে হেঁটে চলেছেন মা

কোলে পাঁচ বছরের সন্তানের নিথর দেহ, হাসপাতাল থেকে বাড়ির পথে হেঁটে চলেছেন মা
পাঁচ বছরের ছেলে বাড়ির কাছেই খেলতে খেলতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। তাঁকে কোলে নিয়ে চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটে গিয়েছিলেন নিশা। সেখানে পৌঁছতেই চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

Tuesday, August 2, 2022

দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে স্ত্রীর চাহিদা মেটাতে হবে, বলছে গবেষণা

 

দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে স্ত্রীর চাহিদা মেটাতে হবে, বলছে গবেষণা

দাম্পত্য জীবনে সবাই সুখী হতে চেয়েও অনেকেই পারেন না। বর্তমানে দাম্পত্য কলহের কারণে ভেঙে যাচ্ছে অনেক বিবাহ। আর বিবাহবিচ্ছেদের মূল কারণগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, সঙ্গীর সঙ্গে যোগাযোগের অভাব, শারীরিক চাহিদায় অপূর্ণতা কিংবা মানসিকভাবে নির্যাতন ও অবমাননা ইত্যাদি। এই কর্মব্যস্ত জীবনে নারী-পুরুষ সবাই ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটান। এর প্রভাবই পড়ে দাম্পত্য জীবনে। বিশেষ করে অনেক পুরুষই সারাদিন ব্যস্ত সময় পার করায় স্ত্রীর উপর সেই ক্ষোভ বা রাগ প্রকাশ করেন। এর থেকে সংসারে অশান্তি আরও বাড়তে থাকে। অনেকেই বলেন, স্ত্রী খুশি তো সংসারে শান্তি! ঠিক একই দাবি করছেন গবেষকরাও। সংসারের সুখ নাকি নির্ভর করে স্ত্রীর সুখের উপর, এমনটিই জানাচ্ছে এক গবেষণা।

Monday, August 1, 2022

ডাইনি অপবাদে তিনশ বছরে ৬০ হাজার মানুষকে পিটিয়ে হত্যা!,৩০ লাখ মানুষকে ডাইনি হিসেবে বিচারের মুখোমুখি

 

ডাইনি অপবাদে তিনশ বছরে ৬০ হাজার মানুষকে পিটিয়ে হত্যা!,৩০ লাখ মানুষকে ডাইনি হিসেবে বিচারের মুখোমুখি

ডাইনি অপবাদে তিনশ বছরে ৬০ হাজার মানুষকে পিটিয়ে হত্যা!,৩০ লাখ মানুষকে ডাইনি হিসেবে বিচারের মুখোমুখি




ডাইনি অভিযোগে হত্যা: এখনও চলছে ১০ আগস্ট বিশ্ব ডাইনি হত্যাবিরোধী দিবস৷ ইউরোপে তিনশ বছরে অন্তত ৩০ লাখ মানুষকে ডাইনি হিসেবে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো৷ হত্যা করা হয়েছিল ৬০ হাজার৷ তবে আফ্রিকাসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে উইচ হান্ট বা ডাইনি নিধন এখনও চলছে৷ গত সাত বছর ধরে প্রতি বছর গড়ে ডাইনি অপবাদে খুনের ঘটনা ৩৫টি। সিআইডি-র রিপোর্ট বলছে, ২০১৫ সালে এ ভাবে ৪৬ জন মহিলাকে পিটিয়ে মারা হয়। প্রতিদিন গড়ে তিন জন। গত ২২ বছরে এক হাজার মানুষকে ডাইনি সন্দেহে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে ঝাড়খণ্ডে। ২০২২ সালে আজ অবধি পাঁচজন এই কুসংস্কারের কারণে আক্রান্ত হয়েছেন। চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ঝাড়খণ্ড পুলিশের রিপোর্টে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এই রিপোর্ট বলছে, ডাইনি অপবাদে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় এক হাজার জনের মধ্যে ৯০ শতাংশই মহিলা।

ডাইনি অপবাদে তিনশ বছরে ৬০ হাজার মানুষকে পিটিয়ে হত্যা!,৩০ লাখ মানুষকে ডাইনি হিসেবে বিচারের মুখোমুখি

Friday, July 29, 2022

ছেলেটা – হুমায়ূন আহমেদ

 

ছেলেটা – হুমায়ূন আহমেদ

আমি এলিফেন্ট রোডের যে এ্যাপার্টমেন্ট হাউসে থাকি তার নিয়ম কানুন খুব কড়া। যে-কেউ ইচ্ছা করলেই ঢুকতে পারে না। গেটেই তাকে আটকানো হয়। রিসিপশনিস্ট (মহিলা নয়, পুরুষ) কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করেন–কোথায় যাবেন? কার কাছে যাবেন? কোত্থেকে এসেছেন? এখানেই শেষ না। যার কাছে যাওয়া হবে তাকে ইন্টারকমে ধরা হয়। তাকে বলা হয়–অমুক ভদ্রলোক আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান। পাঠাব? যদি পাঠানোর অনুমতি পাওয়া যায় তবেই দর্শনার্থী ঢুকতে পারেন।

ব্যবস্থা ভাল। উটকো লোকের ঝামেলা থাকে না।

আমি আবার এই ভাল ব্যবস্থার উপর এককাঠি। আমার দিক থেকে রিসিপশনিস্টকে নির্দেশ দেয়া আছে সকাল দশটার আগে কাউকেই যেত আসতে না দেয়া হয়। আমি রাত জেগে লেখালেখি করি,পড়াশোনা করি। ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়। হাত-মুখ ধুতে ধুতে দশটা বেজে যায়। বাসি মুখে কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা। করে না।

রিসিপশনিস্ট আমার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। একদিন তার ব্যতিক্রম হল। ভোর ছটায় ইন্টারকম বেজে উঠল। একজন ছেলে এসেছে। খুব কাঁদছে। একটা। জরুরী চিঠি সে নিয়ে এসেছে। নিজেই আমার হাতে দেবে। এক্ষুণি দিতে হবে।

আমি তাকে উপরে পাঠাতে বললাম। চেহারা দেখে মনে হল কলেজে পড়ে। ভদ্র চেহারা। মাথা নিচু করে আছে। হাতে রুমাল। মাঝে মাঝে রুমালে চোখ মুছছে। আমি বললাম, কি ব্যাপার? সে একটা কাগজ বের করে দিল। একটা চিঠি। আমাকে সম্ভাষণ করে লেখা। চিঠির ভাষা হুবহু মনে নেই মোটামুটিভাবে এরকম–

হুমায়ূন সাহেব,

আপনার মেয়ে শীলা আমার ছাত্রী। আমি খুব বিপদে পড়ে আমার ছেলেকে আপনার কাছে পাঠালাম। আমার স্বামী গতকাল রাত তিনটায় মারা গেছেন। আমার হাত একেবারে খালি। মৃতদেহের সৎকারের জন্যে এই মুহূর্তে কিছু টাকা দরকার। আপনি কি ঋণ হিসেবে আমার ছেলের হাতে দুহাজার। টাকা পাঠাবেন? ছাত্রীর বাবার কাছে টাকার জন্যে হাত পাততে হল—এই লজ্জা আমার রাখার জায়গা নেই। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক। ইতি আমি আমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম–মা,… এই নামে তোমার কোন টিচার আছেন?

শীলা বলল, হ্যাঁ, উনি আমাদের ক্লাস টিচার। খুব ভাল টিচার। আমি আর সময় নষ্ট করলাম না। ছেলেটির হাতে দুহাজার টাকা দিলাম। তাকে সান্ত্বনা দিয়ে কিছু কথা বললাম। যদিও জানি, প্রবল শোকের সময়ে সান্ত্বনার কথা খুব হাস্যকর শোনায়। ছেলেটি চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল। আমার খানিকটা মন খারাপ হল এই ভেবে যে, মৃত্যুর প্রবল শোকের যন্ত্রণা ছাপিয়ে অর্থকষ্টের যন্ত্রণা এই সমাজে বড় হয়ে উঠছে।

হাত-মুখ ধুয়ে নাশতার টেবিলে বসেই মনে হল–একটা ভুল হয়েছে। ছেলেটি মিথ্যা কথা বলে টাকা নিয়েছে। চিঠির বক্তব্য অনুসারে ছেলেটির বাবা মারা গেছেন রাত তিনটায়—তার মাত্র তিন ঘণ্টা পরে সে টাকার সন্ধানে বের হয়েছে। এটা তো হতে পারে না। মৃত্যুর প্রাথমিক ধাক্কা সহ্য করতেও অনেক সময় লাগবে। টাকার কথা মনে হবে প্রাথমিক ধাক্কা কেটে যাবার পর।

আমার মন বেশ খারাপ হল। দুহাজার টাকা এমন কোন অর্থ না যার জন্যে মন এতটা খারাপ হবে। মন খারাপ হল ছেলেটির প্রতারণার কৌশলে। বাবার মৃত্যুর কথা বলে সে কাঁদছিল। ভান না, সত্যি সত্যি কাঁদছিল–চোখ বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছিল। আমরা নানাভাবে মানুষকে প্রতারিত করি–বাবা-মার মিথ্যা মৃত্যুর কথা বলে মানুষকে প্রতারিত করি না। তাছাড়া প্রতারকের চোখে কখনো অশ্রু টলমল করে না।

তাহলে কি ছেলেটি সত্যি কথাই বলেছে? ব্যাপারটা নিয়ে খোঁজ-খবর করতেও আমার লজ্জা লাগল। যদি ব্যাপারটা সত্যি হয় তাহলে ভদ্রমহিলা কি মনে করবেন? তিনি কি ভাববেন না সামান্য দুহাজার টাকা দিয়ে সে খোঁজ-খরব শুরু করেছে?

মনের ভেতর একটা কাটা খচখচ করতে লাগল। সেদিন সন্ধ্যায় শীলাকে জিজ্ঞেস করলাম, মা, আজ কি তোমাদের ক্লাস টিচার… এসেছিলেন?

সে বলল, হুঁ।

ক্লাস নিয়েছেন?

হুঁ। ক্লাস নেবেন না কেন?

হাসি-খুশি ছিলেন?

শিক্ষকরা কখনো হাসিখুশি থাকে না। শিক্ষকরা গম্ভীর থাকে।

আমার মনটা গ্লানিতে ভর্তি হয়ে গেল। একটা নষ্ট ছেলে আমাকে বোকা বানিয়ে চলে গেছে! সে ব্যবহার করেছে একজন শিক্ষিকার নাম। সেই শিক্ষিকাকেও ব্যাপারটা জানানো দরকার।

কাজেই আমি তাকে জানালাম। তিনি অসম্ভব ব্যথিত হলেন এবং বললেন–যে ছেলে আপনার কাছে গিয়েছিল সে বাইরের কেউ না। সে আমারই ছেলে।

সে কি?

সে ড্রাগ ধরেছে। ড্রাগের টাকার জন্যে নানান কৌশল বের করে। আমার ছাত্রীদের কাছে যায়…

ভদ্রমহিলার চোখ পানিতে ভর্তি হয়ে গেল। তিনি চোখ মুছে বললেন, আমি আপনার টাকা দিয়ে দিচ্ছি।

আমি বললাম, টাকা দিতে হবে না। আপনি ছেলেটির চিকিৎসা করান।

তিনি ক্লান্ত গলায় বললেন–অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। কিছুদিন ভাল থাকে তারপর আবার শুরু করে। আজ এই ড্রাগ আমার ছেলেকে ধরেছে–আস্তে আস্তে সবাইকে ধরবে। কি ভয়ংকর সময়ের দিকে যে দেশটা যাচ্ছে কেউ বুঝতে পারছে না! কেউ না! আপনি লেখক মানুষ, আপনিও বুঝছেন না। বুঝলে ড্রাগ বিষয়ে কিছু লিখতেন।

ভদ্রমহিলা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।

সফদার ডাক্তার – হোসনে আরা

সফদার ডাক্তার  – হোসনে আরা


সফদার ডাক্তার মাথাভরা টাক তার
খিদে পেলে পানি খায় চিবিয়ে,
চেয়ারেতে রাতদিন বসে গোণে দুই-তিন
পড়ে বই আলোটারে নিভিয়ে।
ইয়া বড় গোঁফ তার, নাই যার জুড়িদার
শুলে তার ভুঁড়ি ঠেকে আকাশে,
নুন দিয়ে খায় পান, সারাক্ষণ গায় গান
বুদ্ধিতে অতি বড় পাকা সে।
রোগী এলে ঘরে তার, খুশিতে সে চারবার
কষে দেয় ডন আর কুস্তি,
তারপর রোগীটারে গোটা দুই চাঁটি মারে
যেন তার সাথে কত দুস্তি।
ম্যালেরিয় হলে কারো নাহি আর নিস্তার
ধরে তারে কেঁচো দেয় গিলিয়ে,
আমাশয় হলে পরে দুই হাতে কান ধরে
পেটটারে ঠিক করে কিলিয়ে।
কলেরার রোগী এলে, দুপুরের রোদে ফেলে
দেয় তারে কুইনিন খাইয়ে,
তারপর দুই টিন পচা জলে তারপিন
ঢেলে তারে দেয় শুধু নাইয়ে।
ডাক্তার সফদার, নাম ডাক খুব তার
নামে গাঁও থরথরি কম্প,
নাম শুনে রোগী সব করে জোর কলরব
পিঠটান দিয়ে দেয় লম্ফ।
একদিন সককালে ঘটল কি জঞ্জাল
ডাক্তার ধরে এসে পুলিশে,
হাত-কড়া দিয়ে হাতে নিয়ে যায় চাষাড়াতে
তারিখটা আষাঢ়ের উনিশে।







|| রবী ঠাকুর ও জগদীশচন্দ্র বোসের অটুট বন্ধুত্ব ||

|| রবী ঠাকুর ও জগদীশচন্দ্র বোসের অটুট বন্ধুত্ব ||

☘️
🗓️ ১৮৯৭ সালের এপ্রিল মাস 🗓️
এক সকালে জগদীশচন্দ্রের সঙ্গে পরিচয় করতে এলেন রবীন্দ্রনাথ,তবে দু'জনের দেখা হয়নি, বিজ্ঞানী বাড়িতে ছিলেন না৷ রবীন্দ্রনাথ তাঁর টেবিলে একটি ম্যাগনোলিয়া ফুল রেখে আসেন৷ বন্ধুত্ব যখন সুগভীর জগদীশচন্দ্র রবীন্দ্রনাথের কাছে আবদার করতেন প্রতিবার একটি নতুন গল্প শোনাতে হবে,বন্ধুর সেই দাবি মেনে রবি কবি নতুন গল্প পড়ে শোনাতেন৷ অন্যদিকে জগদীশচন্দ্র তাঁর নতুন গবেষণা নিয়ে আলোচনা করতেন৷

শ্রমিক মজুর কামলা কুলি জেগে ওঠো মজদুর

 

শ্রমিক মজুর কামলা কুলি জেগে ওঠো মজদুর

জেগে ওঠ ,ওঠ জেগে ওঠ ,

শ্রমিক মজুর কামলা কুলি
ভুলে যা ,যা রে সকল
হীনতা ভয়-ভীতি গুলি।।
দাগারে বুকের মাঝে প্রতিবাদের কামান দাগা,
ছুড়ে মার রক্ত কামান,
জুলুমবাজের আস্তানা তে আগুন লাগা।
কোথায় রে গৃহিণীদের ছ্যাকা খাওয়া কিশোরীরা?
চা দোকানের নির্যাতিত শিশুরা কই ?রুখে দাঁড়া।
জেগে ওঠ শান্ত সুবোধ মিথ্যে প্রবোধ শুনব না আর,
মোরা আজ টুটব বাঁধন লুটব নিজের সব অধিকার।
ছুটে আয় মুক্তি নেশায় ঢালতে বুকের তরতাজা খুন,
নিপীড়ন সইব না আর আসলে আঘাত করব দ্বিগুণ।
দাসের শিকল কর রে বিকল কতদিন আর থাকবে পড়ি,
ভেঙে সব ভীতির রাহু রাঙিয়ে বাহু আয় না এবার লড়াই করি।
চল এবার উল্কা বেগে গর্জে উঠি সাগর নদী পাহাড় ছিড়ি,
জালিমের আসন কেড়ে আসন গেড়ে ওদের কে দেই কাঠের পিড়ি।
কোথারে রিক্সা চালক শ্রমিক কৃষক ,
নিপিড়নের শিকার যারা?
বাজারে যুদ্ধ মাদল ,ভাঙতে শিকল,
দীপ্ত পায়ে আগে বারা।
কোথা তোর নির্যাতনে গড়িয়ে পড়া রক্তকণা ক্রভ আঁখি জল,
তা এনে অঙ্গে মেখে জাগিয়ে তোল তোর বাহুবল।
জেগে তোল যুদ্ধ করার অসীম সাহস বুকের পাটা,
বিপ্লবে তোর জালিম দিয়ে মাজলুমাতের চরণ চাটা।
চালারে যার যা আছে তাহাই চালা
খোঁড়া তুই হস্ত চালা,
বুড়া চালা প্রতিবাদের কথামালা।
ওরে ও অন্ধ ফকির বিল্পবি বীর
মার ছুড়ে তোর ভিক্ষা বাটি
ভেঙ্গে ফেল অত্যাচারী, হাঙ্গর কুমির পাপ পিশাচের দুর্গ ঘাঁটি।
ওরে ও মজদুরেরা এক সাথে সব মার লাথি মার,
নিরীহ সান্তরা সব অশান্ত ঝড় রূপ নে এবার।
জেগে ওঠ শিশু কিশোর শ্রমিক যত যুবক নারী,
ছুটে আয় একসাথে সব হেইয়ো বলে লাথি মারি।
ভেঙ্গে দেই জুলুমবাজের ধারালো দাঁত কালো থাবা,
কেড়ে নেই দিন মুজুরের অধিকারের নতুন রবির আলো লাভা।
ভেঙে ফেল শোষণ পীড়ন অত্যাচারের সকল আঁধার,
খুলে ফেল দিনমজুরের অধিকারের বন্দীশালার রুদ্ধ দুয়ার।
কোথারে নির্যাতিত শ্রমিক মুজুর
কামার কুমার
বাজে ওই বিপ্লবী সুর আয়রে ছুটে ভাইরে আমার।
ওরে ও ক্লান্ত অচল নে মনোবল বক্ষে আমার কেতন ঘেড়ে,
ভাঙা তোর যুদ্ধ তরী আবার গড়ি রক্তে আমার ছেড়ে দে রে।
শূন্য সাগর রক্ত দিয়ে ভরব কেটে সকল শিরা,
ভাসিয়ে যুদ্ধ জাহাজ
রুখে দে আজ
সব অবিচার দহন পীড়া।
তোরা ডরাসনে কেউ তুফান এলে স্তব্ধ নিঝুম আঁধার রাতে,
বিপ্লবী এ যাত্রার আমি সামনে আছি মশাল হাতে।
আমি যে শ্রমিক জাতির মুক্তি নেশায় পাগল পারা ,
না আমি থামবো না রে বঞ্চিত ঐ শ্রমিক জাতির মুক্তি ছাড়া।
শিরোনাম :-জেগে ওঠো মজদুর
লেখায় ;-আমি ফেরদৌস আহমেদ
 
 
 

Thursday, July 28, 2022

মেঘনায় ঢল ___হুমায়ুন কবির শোন্ মা আমিনা, রেখে দে রে কাজ ত্বরা করে মাঠে চল,

 

মেঘনায় ঢল ___হুমায়ুন কবির

মেঘনায় ঢল

___হুমায়ুন কবির
শোন্ মা আমিনা, রেখে দে রে কাজ ত্বরা করে মাঠে চল,
এল মেঘনায় জোয়ারের বেলা এখনি নামিবে ঢল।

Wednesday, July 27, 2022

ফেরদৌস আহমেদ এর কবিতা, ফেরদৌস আহমেদের কয়েকটি কবিতা গুচ্ছ

 

ফেরদৌস আহমেদ এর কবিতা, ফেরদৌস আহমেদের কয়েকটি কবিতা গুচ্ছ

01

আমায় যদি জানতে আস খুঁজতে আস বন্ধুরে

চিরকালেই আমায় পাবে সহজ সরল সুন্দরে।

দু চোখ মেলে খুঁজলে আমায় পাবে পথে প্রান্তরে
হৃদয় দিয়ে খুঁজলে পাবে বন্ধু তোমার অন্তরে।
তোমার চোখে অশ্রু এলে আমায় পাবে রুমালে
মাথার নিচে আমায় পাবে বন্ধু তুমি ঘুমালে।
আমায় পাবে তিস্তা গড়াই মধুমতির কিনারে
আমায় পাবে বীর সেনাদের স্মৃতির শহীদ মিনারে।
আমায় পাবে জলপ্রপাত সাগর নদী বৃষ্টিতে
আমায় পাবে গল্পকথায় ভিন্ন কিছুর সৃষ্টিতে।
আমায় পাবে পথের শিশুর ভাঙ্গাচুরা বস্তিতে
পাবে তাদের দুঃখ ব্যথা আনন্দ সুখ স্বস্তিতে।
তারায় তারায় আমায় পাবে স্তব্ধ নিঝুম নিশিতে
আমায় পাবে আঁধার বাসির কেরোসিনের শিশিতে
প্রেমিক রূপে আমার পাবে তাজমহলের গৌরবে
আমায় পাবে পাখির গানে মিষ্টি ফুলের সৌরভে।
আমার পাবে মেথর মুচির আত্মা দেহের ময়লাতে
আমায় পাবে আমার কামার ভাইয়ের হাতের কয়লাতে।
আমায় পাবে শিশুর হাসি তাদের কোমল মনটাকে
পাবে তাদের খেলনা খুশি গলায় বাঁধা ঘন্টাতে।
আমায় পাবে নির্যাতিত গৃহবধূর কান্নাতে
পাবে আমার বউয়ের সাথে ঘর গোছানো রান্নাতে।
আমায় পাবে বিদ্বাশ্রমের চাদ মেজে আর দেয়ালে
পাবে ইহার বন্দিবাসির যত্ন সেবা খেয়ালে।
সন্ধি স্বরূপ আমায় পাবে দুই মানুষের বিবাদে
মুজাহিদের তরবারি তীর ঘোড়ায় পাবে জিহাদে।
আমায় পাবে রোগীর ব্যথা তাদের কাঁদন অশ্রুতে
খুশির মাঝে আমায় পাবে তাদের সেবা-শশ্রূতে
আমায় পাবে পাগলিনীর উদাস পথের চলাতে
নীল গালিচায় পাবে তাহার নগ্ন পায়ের তলাতে।
বংশী হাতে আমায় পাবে গান কবিতার ছন্দতে
শান্তি কেতন হাতে পাবে ধর্ম নিয়ে দ্বন্দ্বতে।
সেনার রূপে আমার পাবে সৎ শাসকের শাসনে
ঘুনের মত আমায় পাবে দুষ্ট রাজার আসনে।
আমায় পাবে তিতুমীরের কামান দাগার গোলাতে
আমায় পাবে বেদের দলের কান্নাহাসির ঝোলাতে।
ঘাসের ফুলের মত আমায় পাবে ফুলের মেলাতে
আমায় পাবে বিশ্ববাসীর করুন অবহেলাতে।
আমায় পাবে চাঁদের আলো ভোরের শিশির বিন্দুতে
পাবে এতিম অসহায়ের ব্যথার বিষাদ সিন্ধতে।
জলের মত আমায় পাবে শিউলি গাছের গোড়াতে
আমায় পাবে চিকিৎসকের রক্তমাখা চুরাতে।
বুলেট বোমায় আমায় পাবে আমার এ দেশ রক্ষাতে
আমায় পাবে শত্রুসেনার মরণব্যাধী যক্ষাতে।
আমায় পাবে দীন ভিখারির শূন্য ভাতের থালাতে
আমায় পাবে ধর্ষিতাদের বুকের বেদন জ্বালাতে।
দুই স্থাপনার মধ্যখানে আমায় পাবে বন্দীরে
পাহারা দেই ঝগড়া না হয় মসজিদে আর মন্দিরে।
ফুলের সাথে সুতায় গাঁথা আমায় পাবে বাসরে
আমায় পাবে গাজী কালুর গ্রাম্য পুঁথির আসরে।
জগৎজুড়ে সৎ সৌখিন সুন্দর আছে যেখানে
ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ধারায় আমায় পাবে সেখানে।
শিরোনাম আমার ঠিকানা
লেখায় আমি ফেরদৌস আহমেদ।

লন্ডনের ৪০ ডিগ্রির ওপরের তাপমাত্রায় ভারতবর্ষের পাংখাপুলারদের শোষণের ইতিহাস কি মনে পড়ে!

লন্ডনের ৪০ ডিগ্রির ওপরের তাপমাত্রায় ভারতবর্ষের পাংখাপুলারদের শোষণের ইতিহাস কি মনে পড়ে!




কখনো কখনো পাখাওয়ালাদের বসার স্থানে চিনি ছিটিয়ে দেওয়া হতো। তারা ঘুমিয়ে পড়লে পিঁপড়া এসে তাদের ঘামে ভেজা শরীরে কামড় বসাতো। আরেকটি ব্যবস্থা ছিল পাখাওয়ালার বাহুতে একটি হাঁস রাখা। কাজের সময় যাদের হাত থেকে ওই হাঁস ছুটে যেত, তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হতো।
পা দিয়ে পাখা টানছেন পাংখাপুলার, কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রামের চেষ্টা। ছবি: এলসওর্থ হান্টিংটন, দ্য হিউম্যান হ্যাবিট্যাট, ভায়া উকিমিডিয়া কমনস

Latest

হাতের স্পর্শে সত্যিই কি স্তনের আকার বৃদ্ধি

Featured Post

আলট্রাসনগ্রাম ছাড়াই যেভাবে জানবেন গর্ভের শিশু ছেলে নাকি মেয়ে! জেনে নিন বিস্তারিত-

গর্ভবতী নারীদের সঙ্গে তার বন্ধুরা বা আত্মীয়রা কথা বলার সময় অবশ্যই জিজ্ঞেস করেন, শিশুটি ছেলে না কি মেয়ে হবে? এটি প্রায় সকলের জন্য একটি মজ...

jk