চোখের রোগ ও সমস্যা এবং প্রতিকার ছানিপড়া দৃষ্টি শক্তি সমস্যা নেত্রনালী প্রদাহঃ কর্ণিয়ার আলসার বা চোখের ঘাঃ গ্লুকোমাঃ ইউভিয়াইটিসঃ চোখ টেরাঃ চক্ষুগোলকের বাইরের রোগ
চোখের রোগ ও সমস্যা এবং প্রতিকার
চোখ একটি স্পর্শকাতর সংবেদনশীল অঙ্গ, যার সাহায্য আমার এই সুন্দর পৃথিবী দেখতে পাই, তার রূপ উপভোগ করি। চোখে দেখতে না পাওয়া মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় বাংলাদেশে প্রায় ১৮ লক্ষ লোক অন্ধ যার প্রধান কারণগুরি নিম্নে বর্ণিত হলোঃ ছানিপড়া চোখের কর্ণিয়া ও আইরিসের পিছনে অবস্থিত স্বচ্ছ লেন্স বার্ধক্য জনিত কারণে এবং অন্যান্য কারণে অস্বচ্ছ হয়। এই স্বচ্ছ লেন্স অস্বচ্ছ হওয়াকেই ছানিপাড়া রোগ বলে। যে সমস্ত কারণে চোখে ছানি পড়ে তা হলো- ১। বয়স জনিত কারণে ২। আঘাত জতি কারণে ৩। ডায়াবেটিস রোগের কারণে ৪। ইউভিআইটিস (রোগের কারণে ৫। অনিয়ন্ত্রিত ষ্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে ধীরে ধীরে দৃষ্টি ক্ষমতা লোপ পাওয়া, চশমার পাওয়ার পরিবর্তন হওয়া , আলোর চাদিকে রংধনু দেখা, একটি জিনিসকে দুই বা ততোধিক দেখা, দৃষ্টি সীমানায় কালোদ দাগ দেখা, আলোতে চোখ হয়ে আসা ইত্যাদি ছানি রোগের লক্ষণ হতে পারে। এছাড়াও পুরোনো ছানি পেকে চোখে ব্যথা হতে পারে। শিমুদেও ক্ষেত্রে ছানি রোগের কারণে চোখ টেরা হয়ে যেতে পারে। কোন ঔষধ সেবনে ছানি রোগের প্রতিকার হয় না। অপারেশনের মাধ্যমে ছানি রোগের চিকিৎসা করতে হয়। দৃষ্টি শক্তি সমস্যা (ক) প্রেসবাইওপিয়াঃ ইহা চোখের কোন রোগ নয়। চল্লিশ অথবা তদুর্ধ বসসে, বসস জনিত কারণে চোখের গঠন গত পরিবর্তন হয়। চোখের লেন্সের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায়। ফলে কাছে দেখার জন্য লেন্সের আকার পরিবর্তনের ক্ষমতা কমে যায় এবং উক্ত বয়সে কাছে জিনিস ঝাপসা দেখায়। (খ) মায়োপিয়াঃ এ ধরনের রোগীরা কাছে মোটামোটি ভালো দেখতে পারলেও দূরে ঝাপসা দেখে, তাই এদের ক্ষীণদৃষ্টি বলা হয়। অবতল লেন্স বা মাইনাস পাওয়ারের চশমা পরলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। যাদের চোখের ছয় ডায়াপটারের বেশি মাইনাস পাওয়ারের লেন্স লাগে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের পাওয়ারও বাড়তে থাকে, তখান তাকে প্যাথজিক্যাল মায়োপিয়া বলা হয়। সে ক্ষেত্রে চোখের দেয়াল বা স্কে¬রা পাতলা হয়ে যায় এবং রেটিনায় ছিদ্র সৃষ্টি হয়ে পরবর্তীকালে রেটিনা আলাদা হয়ে গিয়ে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। মায়োপিয়াতে চোখের আকার বড় হওয়ার কারণে চোখের দেয়াল পাতলা হয়ে যায়। সে জন্য সামান্য আঘাতেই চেখে অনেক মারাতœাক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং মাযোপিয়া রোগীদের সব সময় চোখের আঘাত থেকে সাবধান থাকতে হবে এবং নিয়মিতভাবে ডাক্তারের পরামর্শে চোখের পাওয়ার পরীক্ষা এবং রেটিনার পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভালো। (গ) অ্যাসটিগমেটিজমঃ এটি এক ধরনের দৃষ্টি স্বল্পতা, যাতে রোগীর কর্ণিয়ার যেকোনো এক দিকে (লম্বা দিকে, প্রস্থে অথবা কোণাকুণি) পাওয়ার পরবর্তন হয় বলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, এর কারনে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা একটি জিনিসকে দু’টি দেখা এবং মাথাব্যথা হতে পারে। সিলিন্ডার লেন্স ব্যবহারে এ সমস্যার সমাধান হয়। নেত্রনালী প্রদাহঃ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটা বেশ সাধারণ রোগ। এতে সব সময় চোখ থেকে পানি পড়ে এবং চোকের কোণায় চাপ দিলে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ বের হয়। বারবার নালী বন্ধ হয়ে চোখের পানি যেখানে জমা থাকে তা ফুলে যায় এবং জীবাণু সংক্রমণের কারণে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এন্টিবায়োটিক সেবনে এ রোগ সাময়িকভাবে ভালো হলেও বারবার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। সেক্ষেত্রে ডিসিআর (উঈজ) অপারেশনের মাধমে নেত্রনালীর সাথে অন্য আর একটি পথে নাকের যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। এতে রোগীর পানি পড়া বন্ধ হয়। এটি খুবই ছোঁয়াচে রোগ, যাতে চোখে অনেক পিচুটি জমে, চোখ লাল হয় এবং ফুলে ওঠে। একজন থেকে আশপাশের সবার মাঝে ছড়াতে পারে। এটি ভাইরাসজনিত রোগ যাতে পরবর্তী ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। রোদে সানগ্লাস ব্যবহার করা, ডাক্তারের পরামর্শ মতো ঘনঘন এন্টিবায়োটিক ড্র্রপ দেয়া এবং চোখের পরিচর্যা করলে এ রোগ দীর্ঘায়িত হয় না। মনে রাখতে হবে, এই রোগের সাথে মাঝেমাঝে চোখের কর্ণিয়া বা কালো রাজার প্রদাহ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্যথা-বেদনাও হতে পাওে, এমতাবস্থায় চক্ষু চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ ব্যতীত চোখে ড্রপ ব্যবহার করা উচিত নয়। কর্ণিয়ার আলসার বা চোখের ঘাঃ কৃষি প্রধান এই দেশে অন্ধত্বের অন্যতম কারণ চোখের ঘা বা কর্ণিয়ার আলসার হয় বিভিন্ন কারণে । আঘাত জনিত কারণ হলো প্রধান। সাধারণত ধান কাটার মৌসুমে ধানের ধারালো পাতা দিয়ে চোখের আঘাতের পর কর্ণিয়াতে ঘা হয়। এ ছাড়াও শিশুদের ক্ষেত্রে অপুষ্টিজনিত কারনে ভিটামিন “এ” এর অভাবে চোখের কালো রাজা প্রথমে শুকিয়ে যায় এবং পরবর্তীকালে আলসার হয়ে যায়। আমাদের দেশে শিশুদের অন্ধত্বের অন্যতম কারন এটি। এছাড়াও কোনো কারণে চোখে জীবাণুর সরাসরি সংক্রমণেও আলসার বা ঘা হতে পারে। গ্লুকোমাঃ এটা চোখের এমন একটি রোগ, যাতে চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে, পেছনের স্নায়ু অকার্যকর হয়ে ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি চলে যায়। গ্লুকোমা হলো বাংলাদেশ তথা পৃথিবীতে অনিবারণযোগ্য অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। যেকোনো বয়সে এ রোগ হতে পারে। জন্মের সময বেশ বড় চোখে এবং উচ্চ চক্ষুচাপ নিয়ে জন্মালে, একে কনজেনিটাল গ্লুকোমা বা জন্মাগত উচ্চ রক্তচাপ বলে। তরুণ বয়সেও হতে পারে, একে বলে জুভেনাইল গ্লুকোমা। বেশির ভাগ গ্লুকোমা রোগ ৪০ বছরের পর হয়। এদের প্রাথমিক গ্লুকোমা বলে। বেশি বয়সজনিত চোখের গঠনে পরিবর্তন, জন্মগত গঠনের ক্রটি, আঘাত, চোখ লাল হওয়া, ডায়াবেটিসজনিত চোখের রক্তহীনতা, অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড বা হরমোন থেরাপি, ছানি পেকে যাওয়া ইত্যাদি কারণে গ্লুকোমা হতে পারে। বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে রোগীরা ডাক্তারের কাছে আসতে পারে। হঠাৎ করে এক চোখে প্রচন্ড ব্যথা হয়ে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, তার সাথে প্রচন্ড মাথা ব্যথা ও বমি বমি ভাব হতে পারে। আবার সব সময় হালকা চোখের এবং মাথা ব্যথার অনুভূতি (বিশেষ করে কম আলোতে) এবং আন্তে আস্তে দৃষ্টি শক্তি কমে যেতে পারে। অন্য দিকে ব্যথাবিহীন উভয় চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যাওয়া এবং চশমার পাওয়ার পরিবর্তন নিয়েও রোগীরা ডাক্তারের কাছে আসে মাঝে মাঝে দুষ্টিসীমানার যেকোনো এক পাশে কালো হয়ে যাওয়া, ছানি পেকে চোখ লাল হওয়া ইত্যাদি এ রোগের উপসর্গ হতে পারে। জন্মগত বড় চোখ, চোখ হতে পানি পড়া এবং আলোতে চোখ বন্ধ করে ফেলা জন্মগত গ্লুকোমার লক্ষণ হতে পারে। স্বাভাবিক চোখের চাপ(১০-২১) মি.মি. মার্কারি। অস্বাভাবিক চোখের চাপ থাকলে সমস্ত পরীক্ষার মাধ্যমে গ্লুকোমা শনাক্ত করে ত্বরিত চিকিৎসা বাঞ্চনীয়। ইউভিয়াইটিসঃ চোখের পুষ্টি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রক্তনালী পূর্ণ একটি স্তর বা লেয়ার আছে, যাকে ইউভিয়া বা ভাসকুলার কোট বলা হয়। এই ভাসকুলার কোটের প্রদাহকে ইউভাইটিস বলা হয়। চোখে আঘাত, জীবাণুর সংক্রমন, কানেকটিভ টিস্যু বা যোজককলার রোগ ইত্যাদি কারণে এ রোগ হতে পারে। চোখে ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, আলোতে না যেতে পারা, মাথাব্যথা, ঝাপসা দৃষ্টি ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে রোগের লক্ষন অনেক দেরিতে বোঝা যায় বলে রোগ জটিলরূপ ধারণ করে। কানেকটিভ টিস্যু রোগ, বাতরোগ, ফুসফুসের রোগ, কিডনিরোগ তথা যৌন রোগের সাথেও এ রোগের উপস্থাপন হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না করালে এ রোগের ফলে ছানি রোগ, চোখের উচ্চচাপ রোগ (গ্লুকোমা), রেটিনার রোগ ইত্যাদি কারণে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এই রোগে ত্বরিত চিকিৎসা প্রয়োজন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হোমাট্রপিন অথবা এট্রোপিন আইড্রপ যা দু-তিন বার ব্যবহার করে ব্যথা এবং প্রদাহ দু’টিই কমে। রোগের উপসর্গ এবং উপস্থাপনভেদে স্টেরয়েড এবং এন্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। অবশ্যই শরীরের অন্যান্য রোগের (যার সঙ্গে ইফভিয়াইটিস রোগের সম্পর্ক রয়েছে) চিকিৎসা করাতে হবে। প্রয়োজনে মেডিসিন রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ত্বরিত চিকিৎসায় এ রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়। এট্রোপিন আইড্রপ ব্যবহারের ফলে রোগী সাময়িক ঝাপসা দেখলেও পরবর্তীকালে ঔষধ বন্ধ করলে আবার ঠিক হয়ে যায়। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিরেকে কোনো ঔষধ দেয়া বা বন্ধ করা যাবেনা এতে রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে। চোখ টেরাঃ চোখের মাংসপেশি চোখকে একটি নির্দিষ্ট দিকে অবস্থন করতে সাহায্য করে। মাংসপেশির সহায়তায় আমরা চোখকে এদিক সেদিক নাড়াতে পারি। কোনো কারণে কোনো মাংসপেশি দুর্বল হয়ে গেলে উল্টো দিকে বেঁকে যায়। একে টেরা চোখ বলে। মাংসপেশির রোগ, স্নায়ুরোগ, আঘাত ইত্যাদি কারণে চোখ টেরা হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে দৃষ্টিস্বল্পতার জন্য চোখ টেরা হতে পারে আবার টেরা হওয়ার জন্য দৃষ্টি স্বল্পতা এবং অলস চোখ(অসনষুড়ঢ়রধ) হযে যেতে পারে। একটি জিনিসকে দু’টি দেখা, দৃষ্টিস্বল্পতা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি টেরা চোখের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। প্রাথমিকভাবে মাঝে মাঝে চোখ টেরা হলেও আস্তে আস্তে তা স্থায়ী রূপ নেয়। চিকিৎসার ক্ষেত্রে টেরা চোখের কারণ ও ধরন বের করা জরুরি। শিশুদের ক্ষেত্রে দৃষ্টি ত্বরিত চিকিৎসা জরুরি। চশমা দিযে দৃষ্টিস্বল্পতা দুর করে শিশুদের অনেক টেরা চোখ সোজা করা যায়। কিছু চোখের ব্যয়ামের ম্যধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় টেরা চোখের চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে। দৃষ্টিকটু বিধায় বাঁকা চোখের স্থায়ী চিকিৎসা হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে অপারেশনকে বেছে নেয়া হয়। চোখের ক্যান্সার যেমন রেটিনেব্লাসটোমার প্রাথমিক অবস্থায় শিশুদের চোখ টেরা হয়ে যেতে পারে। টেরা চোখের রোগীদের নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ ও চোখের পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভালো। চক্ষুগোলকের বাইরের রোগ (ক) ব্লফারাইটিসঃ এটি হলো আইলিড বা চোখের পাপড়িতে অবস্থিত চুলের চুলকানি,. আলোতে চোখ বন্ধ হয়ে আসা, চোখে জালাপোড়া করা ইত্যাদিও অনুভূতি হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শে চোখের নিয়মিত পরিচর্যা (যেমন- মাথার খুশকিও চোখের চুলের গোড়া পরিষ্কার করা) ও ঔষধ সেবনে এ রোগের বার বার আক্রমণ রোধ করা সম্ভব। (খ) টোসিসঃ এটি হলো চোখের মাংসপেশির রোগ। এতে চোখে পাতা নিচে নেমে যায়। আঘাত, স্নায়ু দুর্বলতা,বার্ধক্যজনিত কারণে এ রোগ হতে পারে। সমস্যা খুব বেশি হলে অপারেশনের মাধ্যমে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চিকিৎসা সম্ভব। (গ) চেখের অঞ্জলি ঃ এটি চোখের চুলের গোড়ায় অবস্থিত জিস বা মোল গ্রস্থির প্রদাহ। এতে প্রন্থির নিঃসরণ জমে ইনফেশন হয়ে ফুলে ওঠে। এতে প্রচন্ড ব্যথা হয়ে চোখের লিড ও চুলের গোড়া ফুলে যায়। ডাক্তারের পরামর্শে গরম সেক ও ঔষধ ব্যবহারে এ রোগ ভালো হয়। বার বারযাদের অঞ্জলি হয় তাদের ডায়াবেটিসের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত। (ঘ) মেওয়াঃ চোখের পাতার ভিতর ব্যথাবিহীন টিউমারের মতো ফুলে যায়। এটি চোখের পাতার ভিতর অবস্থিত মিবোমিয়ান গ্রন্থির দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ। অপারেশনের মাধ্যমে এর চিকিঃসা করা যায়। বারবার মেওয়া দৃষ্টি স্বল্পতার কারণেও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দৃষ্টি পরীক্ষা এবং স্বল্পতা থাকলে চশমা দেয়া যেতে পারে।
চোখের মারাত্মক এই ৯টি লক্ষণ আপনার নেই তো? ১০ নভেম্বর, ২০১৪ ২০:৫৯:২৭ শরীরের নানা সমস্যা চোখেও প্রতিফলিত হয়। চিকিৎসকরা এ কারণে চোখ দেখেই বহু রোগের লক্ষণ নির্ণয় করতে পারেন। এ লেখায় দেওয়া হলো ৯টি লক্ষণ। আপনার চোখে যদি এর কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে দেরি করবেন না। দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। ১. চোখে ছোট লাল দাগ চোখের সাদা অংশে যদি বিন্দু বিন্দু রক্ত জমে লাল দাগ তৈরি হয় তাহলে তা অবহেলা করবেন না। এটি হতে পারে ডায়াবেটিসের লক্ষণ। এটি হতে পারে সিডিসির একটি লক্ষণ, যা প্রচুর মানুষের হয়ে থাকে। যদি রক্তের চিনির মাত্রা অনেকখানি বেড়ে যায় তাহলে এটি হতে পারে। ২. রক্ত জমাট বাধা চোখে বিভিন্ন সমস্যার কারণে কিছুটা বড় আকারে রক্ত জমাট বাধার মতো চিহ্ন দেখা যায়। এটি হতে পারে মারাত্মক কাশি থেকে শুরু করে ফাংগাস সংক্রমণের কারণেও। ৩. চোখে চুলকানি অ্যালার্জি থাকলে প্রায়ই তা চোখে চুলকানির সৃষ্টি করে। এতে চোখ ফুলে যেতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে তা লাল হয়েও যেতে পারে। ধূলাবালি কিংবা অ্যালার্জির প্রতি সংবেদনশীল কোনো খাবার খেলে এটি হতে পারে। এতে অনেকের চোখ শুকিয়ে যায়, যা সমস্যা মারাত্মক করে তোলে। ৪. শুষ্ক চোখ নানা ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় চোখের শুষ্কতা আসতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ঘুমের ওষুধ, ব্যথার ওষুধ কিংবা উদ্বেগ থেকে মুক্ত থাকার ওষুধ সেবনে। তবে চোখের কিছু রোগের কারণেও আর্দ্রতা তৈরিকারি গ্ল্যান্ডটি অকার্যকর হয়ে এমনটা হতে পারে। ৫. কাছের জিনিস দেখতে সমস্যা অনেক মানুষই বয়স হলে এ সমস্যায় আক্রান্ত হয়। তবে তা ঠিকঠাক ব্যবস্থা নিলে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে দীর্ঘদিন আটকে রাখা যায়। কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়াতেও এ সমস্যা হতে পারে। ৬. ঝাপসা দৃষ্টি চোখের নানা সমস্যার কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে। তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের এ সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। ৭. হঠাৎ আলোর ঝলকানি দেখা রেটিনার মারাত্মক সমস্যার একটি লক্ষণ হতে পারে এটি। যদি এ সমস্যার সঙ্গে চোখে ছায়া দেখা যায় তাহলে তা রেটিনা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার লক্ষণ। এ ধরনের সমস্যায় অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ৮. চোখে ব্যথা চোখের সামান্যতম ব্যথার মতো সমস্যাতেও চিকিৎসক দেখিয়ে নেওয়া ভালো। কারণ চোখের ডাক্তাররা বিভিন্ন লক্ষণ দেখে আগেভাগেই কয়েক ধরনের ক্যান্সার নির্ণয় করতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে ব্রেন টিউমারও। আপনি আয়নায় দেখে কোনোভাবেই এ লক্ষণগুলো বুঝতে পারবেন না। ৯. সাদা বৃত্ত চোখের চারপাশে যদি সাদা বা হলদেটে বৃত্ত দেখা যায় তাহলে তা কোলেস্টরেলের একটি লক্ষণ। এমনটা দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
চোখ একটি স্পর্শকাতর সংবেদনশীল অঙ্গ, যার সাহায্য আমার এই সুন্দর পৃথিবী দেখতে পাই, তার রূপ উপভোগ করি। তাই চোখ অনেক মূল্যবান সম্পদ। এই মূল্যবান সম্পদের রক্ষাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সকলের। সময় থাকতে চোখের চিকিৎসা না করলে কত ক্ষতি হতে পারে তা আমরা কখনও চিন্তাও করিনা। একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) ‘দি ডক্টরস্’ অনুষ্ঠানে আজকের আলোচনার বিষয় ‘চোখের বিভিন্ন সমস্যা ও তার প্রতিকার’। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন- ডা. হারুন-উর-রশিদ (প্রথিতযশা চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, প্রখ্যাত ল্যাসিক, ফ্যাকো ও গ্লোকমা বিশেষজ্ঞ, ঢাকা আই কেয়ার হাসপাতাল)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন- ডা. নন্দিনী সরকার। অনুষ্ঠানটি শুনে লিখিত রুপে সাজিয়েছেন- সোহাগ আশরাফ প্রশ্ন : শিশুরা অনেক সময়ই চশমা পড়তে চায় না। অবহেলা করে। শিশুদের ক্ষেত্রে যাদের পাওয়ারে সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে চশমা পড়া কতটা জরুরী? উত্তর : আসলে বড়দের কিন্তু চশমা পড়া অতি জরুরী নয়। বড়রা চশমা না পড়লে তার হয়তো কোন লেখা পড়তে অসুবিধা হবে। তিনি ঝাপসা দেখবেন। কখনও চোখ ব্যাথা হতে পারে। মাথা ব্যাথাও হতে পারে। কিন্তু শিশুদের বিষয়টা পুরোপুরি ভিন্ন। ধরুন একটি শিশু অভাব, অনটন বা অবহেলার কারণে বড় বা লম্বা হলো না। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির পর যদি অনেক পুষ্টিকর খাবার খাওনো হয় সে কি আর লম্বা হবে? হবে না। ঠিক তেমনি ভাবে ধরুন একটি শিশুর ৫ বছর বয়সে চোখের সমস্যা ছিলো। তখন তার একটি চশমা প্রয়োজন। কিন্তু সেটা যদি না দেওয়া হয় বা না ব্যবহার করা হয় তবে তার সেই ঝাপসা দৃষ্টি সারাজীবনের জন্য ঝাপসাই থেকে যেতে পারে। যেটাকে আমরা লেজি আই বা অলস চোখ বলি। প্রশ্ন : অলস চোখ সম্পর্কে কিছু বলুন! উত্তর : শিশুদের অলস চোখ চশমা দিয়ে সমাধান করা যায়। যেমন ধরুন কোন একটি শিশুর চোখ বেকে আছে। তার ক্ষেত্রে দেখা যায় চশমা দেওয়ার পর চোখ অনেকটা সোজা হয়ে আসে। যাদের ক্ষেত্রে চশমা দিয়ে বাকা চোখ সোজা হয় না তাদের জন্য আমরা বিভিন্ন ধরণের ব্যাম দিতে পারি। অথবা প্রয়োজনে আমরা অপারেশন করতে পারি। প্রশ্ন : চোক হালকা বাকা থাকলে অনেকেই বলেন লক্ষ্মি ট্যারা। এটা কি? উত্তর : আসলে কোন ট্যারাই কিন্তু লক্ষ্মি নয়। সকল ট্যারা চোখেরই কিন্তু চিকিৎসার করা উচিত। প্রশ্ন : ল্যাসিক সার্জারি কি? উত্তর : যাঁদের চোখের পাওয়ার আছে কিন্তু চশমা বা কনট্যাক্ট লেন্স পরতে চান না, তাঁদের জন্য আধুনিক একটি চিকিৎসাব্যবস্থার নাম ল্যাসিক সার্জারি। এক্সাইমার লেজার রশ্মির সাহায্যে চোখের কর্নিয়ায় আকৃতি বা গঠনের পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ চোখের পাওয়ারের পরিবর্তন করা হয়। ল্যাসিক-পদ্ধতির অপারেশন এর প্রকারভেদের মাধ্যমে মাইনাস বা প্লাস পাওয়ারকে পরিবর্তন করে বিনা পাওয়ার বা জিরো পাওয়ার করা হয়। প্রশ্ন : ল্যাসিক সার্জারি কী এবং কেন? উত্তর : সাধারণত দৃষ্টিজনিত সমস্যা অর্থাৎ দুরের বা কাছের বস্তু দেখতে সমস্যা হওয়া বা ঝাপসা দেখা এধরনের চক্ষু সমস্যার সমাধানের জন্যই ল্যাসিক সার্জারি করা হয়ে থাকে। যারা দেখার সমস্যার কারণে (+) বা (-) চশমা ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রেই বেশীরভাগ সময় চিকিৎসকগণ ল্যাসিক সার্জারি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে ঠিক এগুলো ছাড়াও আরো কিছু চিকিৎসায় ল্যাসিক সার্জারি করা হয়। ল্যাসিক সার্জারিতে Laser এর সাহায্যে মূলত চোখের কর্নিয়ার পুরুত পরিবর্তন করে ঝাপসা দেখা বা কম দেখার সমস্যা দূর করা হয়। যাতে রোগীকে চশমা ব্যবহার করতে না হয় বা ভারী চশমার পরিবর্তে খুব অল্প পাওয়ারের চশমা হলেই চলে।
সূত্র: বিকাশপিডিয়া টীম